কক্সবাজারকে ঘিরে হাতে নেওয়া ১৫টি বৃহৎ (মেগা) প্রকল্পের অধিকাংশের জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। কিছু প্রকল্পের জমি হস্তান্তর শেষে চলছে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
ইতিমধ্যে সাবারং অর্থনৈতিক অঞ্চল, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, জালিয়ারদ্বীপ এক্সক্লুসিভ টুরিজম পার্ক, রামুর নোনাছড়ির বিকেএসপির ক্রীড়া শিক্ষা স্কুল, পেকুয়ায় নৌবাহিনীর সাবমেরিন ঘাঁটি ও কুতুবদিয়ায় কোস্টগার্ডের স্টেশনের জন্য জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। বাকি প্রকল্পগুলোরও জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এর মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজে অগ্রগতি হয়েছে ২৫ ভাগ।
৫ আগস্ট কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ (অতিরিক্ত সচিব) সাজ্জাদুল হাসান এসব প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত শহর কক্সবাজারের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই আন্তরিক। ১৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি অর্থ ব্যয় হবে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হবে। পাশাপাশি সারা বিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণও করবে।
জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্র জানায়, এই ১৫ ‘মেগা’ প্রকল্প হলো, মহেশখালীর মাতারবাড়ির ৩৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের ১২ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প, মহেশখালীতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক আরও চারটি পৃথক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ আ ন্ত প্রকল্প, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক সম্প্রসারণ, মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটারের গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্প, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৬ কিলোমিটারের রেললাইন প্রকল্প, পেকুয়ায় নৌবাহিনীর সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণ প্রকল্প, রামুতে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আওতায় ক্রীড়া স্কুল নির্মাণ (বিকেএসপি) ইত্যাদি।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উন্নীতকরণ প্রকল্পের উন্নয়নকাজ ২৫ ভাগ শেষ হয়েছে। বিমানবন্দরের বর্তমান রানওয়ে ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ফুটে উন্নীত করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের ব্যয় হবে ১ হাজার ১২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ জন্য প্রকল্প এলাকায় বসবাসকারী ৪ হাজার ৪০৯টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে খুরুশকুলে।
প্রকল্পের প্রয়োজনে ইতিমধ্যে ৪৩ একর জায়গায় মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। ওই জমিতে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন কর্তৃক চার-পাঁচ তলাবিশিষ্ট শতাধিক ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ শিগগিরিই শুরু হবে।
মাতারবাড়ির কায়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ হাজার ৪১৪ একর জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে এখন মাটি ভরাট, উন্নয়ন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়া পেকুয়া ও মাতারবাড়ির দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের
জন্য তিন হাজার একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা) টেকনাফ উপজেলার সাবরাং মৌজায় প্রায় ১ হাজার ১৪৭ একর জমিতে গড়ে তুলছে ‘সাবরাং অর্থনৈতিক অঞ্চল’। ইতিমধ্যে ওই পরিমাণ জমি বেজার অনুকূলে হস্তান্তর করা হয়েছে। সাবরাং অর্থনৈতিক অঞ্চলের যাতায়াতের জন্য মেরিন ড্রাইভ সড়ক সম্প্রসারণে ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।
টেকনাফের জালিয়ারদ্বীপে গড়ে তোলা হচ্ছে বিদেশি পর্যটকের জন্য এক্সক্লুসিভ টু্যরিজম পার্ক। এই পার্ক স্থাপনের জন্য ইতিমধ্যে ২৭১ একর জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটির (বেজা) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই টু্যরিজম পার্কটি বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ইতিমধ্যে কেবল কার, প্যারাসেইলিং, স্কুবাড্রাইভিং, সি ক্রুজিংসহ অত্যাধুনিক সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এ ছাড়া রামু উপজেলার নোনাছড়ি এলাকায় বিকেএসপির ক্রীড়া স্কুলের জন্য ২৯ দশমিক ৮৫ হেক্টর জমি, পেকুয়া উপজেলার মগনামায় নৌবাহিনীর সাবমেরিন ঘাঁটির জন্য মৌজার ৩৩৩ দশমিক ৭৩ একর জমি, কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ এলাকায় কোস্টগার্ডের স্টেশন স্থাপনের জন্য পাঁচ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, এসব মেগা প্রকল্প ছাড়াও কক্সবাজার সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা, শহরের প্রধান সড়কের যানজট নিরসনের বিকল্প উপায়, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বাঁকখালী নদী খনন, শহরে শিশুপার্ক স্থাপন, স্থায়ী শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণসহ নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এসব বাস্তবায়িত হলে কক্সবাজার হবে পরিকল্পিত নগরী।
পাঠকের মতামত